(ক)
সাদিয়া ঘুমাবে না? রাত ৩ টা ৩৩ মিনিটে ফোনের অপর প্রান্তে থাকা সাদিয়াকে জিজ্ঞেস করলেন অনন্যার বাবা ইমতিয়াজ খান…..
নাহ, আমিও ঘুমাবো না, আপনাকেও ঘুমাতে দিব না…..
হুম, তোমার ভয়েস শুনে অবশ্য অনন্ত কাল কাটিয়ে দেয়া সম্ভব…..
ইশ হয়েছে, শুধু কথাই বলে যাবেন আপনি, এমন ভাবে ঘুমাবো কিনা জিজ্ঞেস করলেন যেন আমি ঘুমাতে চাইলেই আপনি আমাকে ঘুমাতে দিবেন…….
তা দিবো না, কিন্তু তোমাকে কষ্ট দিতে চাই না……..
যেটুকু সময় আপনার সাথে কথা বলি এতটুকু সময়ই আমার জীবনের ভালো সময়। বাকি সময় তো…. এটুকু বলে আর কিছু বলে না সাদিয়া। ইমতিয়াজ খান উত্তর না দিয়ে চুপ করে থাকায় সাদিয়া বললো,
বাদ দিন, অনন্যা ঘুমিয়েছে?…..
কি জানি, দেরি করে ঘুমায় এখন। ওই ছেলেটার সাথে কথা বলে……
হুম, নতুন বয়ফ্রেন্ড তো তাই খুব মজায় আছে……
এই বয়সটাই তো এসব করার, আর তুমি বয়ফ্রেন্ড এর সাথে গল্প করা বাদ দিয়ে আঙ্কেলের সাথে গল্প করছো….
ওহ, আপনি আমার আঙ্কেল, আমি তো জানতামই না, ঠিক আছে এখন থেকে আঙ্কেল বলে ডাকবো…..
আচ্ছা ঠিক আছে ডেকো……
আচ্ছা আঙ্কেল……
হুম্মম…….
হুম্মম আঙ্কেল……
আচ্ছা বাদ দাও, অন্য কথা বলো…..
অন্য কি কথা বলবো আঙ্কেল?......
যা ইচ্ছা……
ঠিক আছে আঙ্কেল……
এবার রাগ লাগে ইমতিয়াজ খানের, ধ্যাত এমন ভাবে বলতেছো কেন?
কেমন ভাবে বলবো তাহলে আঙ্কেল? মিটমিট করে মুচকি হাসে সাদিয়া।
তোমাকে কথায় কথায় আঙ্কেল বলতে বলেছি?
আচ্ছা তাহলে মাঝে মাঝে আঙ্কেল ডাকবো, ঠিক আছে আঙ্কেল?
ধুর না, কখনো আঙ্কেল বলবা না……
তাহলে কেন বললেন যে আপনি আমার আঙ্কেল? কন্ঠে কিছুটা রাগ আর অভিমান নিয়ে বললো সাদিয়া।
তাহলে আমি কি হই তোমার?
কিছুই না, তবে সামনে হবেন?
কি হবো?
যান তো, আমি বলতে পারবো না….. লজ্জা পায় সাদিয়া।
বলো না প্লিজ……
আমি হবো আপনার ওয়াইফ, আর আপনি আমার সুগার ড্যাডি…..
ছিঃ সাদিয়া, অনন্যা শুনলে কি বলবে?
ওমা, আমাদের ডটার, ড্যাডির কথা অনন্যা জানবে কেন?
তার মানে আমি সুগার ড্যাডি??
রাগ করলেন নাকি? আমি তো ফান করলাম, আপনি তো হবেন আমার বুইড়া জামাই……
এত রাত জেগে আছি তোমার কাছে অপমানিত হওয়ার জন্য…..
ইশ রাগ কত আমার বুড়োটার, যান আপনি কচি খোকা, এবার খুশি?
হুম, সাদিয়া একটা কথা……
হুম বলুন……
কালকে ডিনারে শাড়ি পরে আসবা প্লিজ….
আমি তো * ছাড়া বের হই না……
কালকে ওখানে কেউ থাকবে না, প্লিজ এসো…..
আচ্ছা দেখি…..
সাদিয়া আরেকটা কথা……
বলুন না, বার বার পারমিশন নিচ্ছেন কেন?
বলছি, গত কয়েক রাত ধরে একটা সমস্যা হচ্ছে…..
কি সমস্যা?
প্রতিদিন তোমাকে স্বপ্ন দেখছি…..
লজ্জা করে না, এত রাতে নিজের মেয়ের বান্ধবীর সাথে ফ্লার্ট করতে…..
না সাদিয়া, সত্যি তোমাকে স্বপ্ন দেখছি…..
আচ্ছা বুঝলাম, তা কি স্বপ্ন দেখেছেন?
রাগ করো না হ্যাঁ! যে স্বপ্ন দেখলে শাওয়ার নিতে হয় ওসব স্বপ্ন….
সাদিয়ার সাথে এমন সম্পর্ক অনেক দিন ধরে ইমতিয়াজ খানের। সাদিয়া অনেক আগে থেকেই নিজের বান্ধবীর বাবার প্রেমে হাবুডুবু খেলেও ইমতিয়াজ খান সবসময় এড়িয়েই গিয়েছেন। কিন্তু গত কিছুদিন ধরে ইমতিয়াজ খান সরাসরি কোনো কমিটমেন্ট না দিলেও একজন প্রেমিকের মত আচরণ করছেন। কিচ্ছুক্ষন পর পর কল টেক্সট, রাত জেগে কথা বলা, মাঝে মাঝেই রেস্টুরেন্টে খাওয়া। কিন্তু সাদিয়াকে কখনো টাচ বা এডাল্ট কথা বলেন নি। কিন্তু আজ মধ্য রাতে এমন কথা শোনার পর শরীর হিম হয়ে গিয়েছে সাদিয়ার। সে বার বার বলে এসেছে ইমতিয়াজ খান কে বিয়ের ব্যাপারে সে পুরোপুরি আত্ববিশ্বাসী। কিন্তু হঠাৎ করে যখন শুনলো ওই মানুষটার নিয়মিত তাকে নিয়ে স্বপ্ন দোষ হচ্ছে তখন লজ্জায় মিইয়ে গেল সাদিয়া। তাহলে কি তার প্রেমিক প্রতিদিন রাতে ঘুমের মধ্যে তাকে….. ছিঃ ছিঃ আর ভাবতে পারছে না সাদিয়া।
সাদিয়া চুপ করে আছো যে? রাগ করেছো?
না, আচ্ছা এখন ঘুমাই……
সাদিয়া, আই লাভ ইউ….. কোনো ভূমিকা ছাড়াই বলে ফেললেন ইমতিয়াজ খান…..
এই কথাটা শোনার জন্য অনেকদিন ধরে অপেক্ষায় ছিল সাদিয়া। স্বপ্নদোষ এর বিষয়টি এই এক কথায় সাদিয়ার মাথা থেকে বের হয়ে গেল। তার বদলে চোখ থেকে ঝড়ে পরলো দুই ফোটা অশ্রু, ধরা গলায় সাদিয়া বললো,
আবার বলুন……
আই লাভ ইউ সাদিয়া…….
আবার বলুন……
আই লাভ ইউ…….
আবার……
আই লাভ ইউ……
শব্দ করেই কেঁদে দিল সাদিয়া। ইমতিয়াজ খান বললেন,
এই এভাবে কাঁদলে কিন্তু কথা উইথড্র করে নিবো……
এহ, একবার যখন বলছেন আর কখনো উইথড্র করতে পারবেন না, ভালোবাসা আমি ছিনিয়ে নিবো আপনার থেকে…..
সাদিয়া, ছিনিয়ে নিতে হবে না, তোমার কাছে নিজেকে সঁপে দিবো আমি…..
আপনাকে আঁচল দিয়ে বেধে রাখবো সারাজীবন…..
পরে যদি আচঁল পরে যায় বুক থেকে?
ইশ, দুষ্টামি করলে ফোন রেখে দিব কিন্তু…..
কেন? আচঁল পরে গেলে কি লজ্জা পাবে?
আবার এমন কথা বলছেন…..
কি আর এমন বললাম, আর আমি তো স্বপ্নে তোমার সব দেখেই ফেলেছি……
হু হু হু, এখন কিন্তু কেঁদে দিবো আমি ইমতিয়াজ…….
এই নাম ধরে ডাকলে কেন? তোমার কত বড় আমি….
ডেকেছি বেশ করেছি, আরো ডাকবো, একশো বার ডাকবো…..
আবার ডাকো তো…….
কি?
যেভাবে ডাকলে মাত্র……
ইমতিয়াজ….
ইমতিয়াজ খানের মন যেন কেমন করে উঠলো। অনন্যার মা মারা যাওয়ার পর এমন ভালোবাসা মিশ্রিত ভাবে কেউ ডাকে নি তার নাম ধরে…..
অনন্যার সামনে আবার ডেকো না…..
আপনাকে তুমি করে বলি?
বলো……
ইমতিয়াজ, তোমাকে ভালোবাসি….. প্রথমবার তুমি সম্বোধন করে ভালোবাসার কথাটাই বললো সাদিয়া।
তুমি সামনে থাকলে ঠোঁটে চুমু দিতাম তোমার সাদিয়া…..
এহ না, এসব কিছুই হবে না, বিয়ের আগে এসব পাপ…..
তাহলে তো দেখছি তারাতাড়িই অনন্যাকে রাজি করাতে হবে……
সাদিয়ার একটু খারাপ লাগে, তারা দু'জন দু'জন কে বিয়ে করবে এখানে অনন্যার রাজি হওয়ার কি দরকার! ইমতিয়াজ খানের থেকে ভালোবাসা নিশ্চয়তা পেয়েই সাদিয়ার মন জুড়ে অনেকটা অধিকার তৈরি হয়ে গিয়েছে ইমতিয়াজ খানের প্রতি।
সকালে নাস্তার টেবিলে বসে বেশি কথা বললেন না ইমতিয়াজ খান। নাস্তার পর অনন্যা টিভি দেখছে পাশে গিয়ে বসলেন ইমতিয়াজ খান। কথা টা কিভাবে বলবেন বুঝতেন না ইমতিয়াজ খান।
পাপা, কিছু বলবে?
আচ্ছা অনন্যা, আমার থেকে কখনো দূরে চলে যাবি?
হটাৎ এই কথা বললে কেন পাপা?
না, আমার কোনো আচরণে যদি কষ্ট পেয়ে কখনো দূরে চলে যাস…….
পাপা, তুমি কখনো আমাকে কষ্ট দাও নি, আর তুমি ছাড়া আমার আছেই বা কে? উল্টো আমার জন্য তুমি সারাজীবন একা থেকেছো……
অনন্যা এখন কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে, তুই মাঝে মাঝেই এখন বড় বড় কথা বলিস। নিজের উপরে দোষ দেয়া কে শিখিয়েছে তোকে?
আচ্ছা পাপা আর বলবো না……
আচ্ছা, তুই আর সাদিয়া মানিয়ে নিতে পারবি?
তুমি কি সাদিয়াকে বিয়ে করতে চাচ্ছো??
যদি তোর কোনো অসুবিধা না থাকে……
পাপা, এটা সম্পুর্ন তোমাদের দুইজনের বিষয়। আমার আলাদা করে তোমার বা সাদিয়ার সাথে মানিয়ে নেয়ার কিছু নেই, আমি যেমন আছি তেমনই থাকবো। তোমরা যদি মনে করো তোমরা একে অপরের জন্য বেস্ট চয়েস তাহলে জাস্ট ডু ইট……
মা, আমার উপর কোনো রাগ রাখিস না, তুই আমার উপরে রাগ করলে তোর মা ও আমার উপর রাগ করে থাকবে……
অনন্যা ভাবে শুধু ৪ মাস বিয়ের সম্পর্কে একটা মানুষকে আরেকটা মানুষ কিভাবে এসে এত ভালোবাসতে পারে!